মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১১:১০ পূর্বাহ্ন

বাতরোগ প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

বাতরোগ প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

স্বদেশ ডেস্ক:

বাতরোগ এমন এক রোগ, যাতে সন্ধিতে দীর্ঘকালীন ব্যথা হয়। সন্ধির চারপাশের টিস্যু বা কলাসহ শরীরের অন্যান্য ইন্দ্রিয়েও ব্যথা হতে পারে। শরীরের সন্ধি বা গিঁঠগুলো ফুলে বড় হয়ে যায়। অসহ্য ব্যথা হয়। কোনো কোনো সময় নড়াচড়া করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ রোগের কারণে শরীরের টিস্যুগুলো ভুলবশত নিজের সুরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমেই আক্রমণের শিকার হয়ে থাকে। সুরক্ষাব্যবস্থা কোষের একটি জটিল গঠন ধারণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজেই আক্রমণকারী হিসেবে শরীরের বিরুদ্ধে ‘খুঁজে বের করা এবং ধ্বংস করা’ নীতি অনুসরণ করে। রোগীর রক্তে এমন কিছু অ্যান্টিবডি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) আছে, যা তাদের নিজের শরীরের টিস্যুগুলো লক্ষ্যবস্তু মনে করে এবং এ কারণে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু আর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘকালব্যাপী রোগ, তাই অনেক সময় কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই দীর্ঘদিন পরে এটি রোগীর দেহে প্রকাশ পায়।

বাতরোগ একটি সিস্টেমেটিক ডিজিজ। এ রোগ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট আক্রান্ত করার পাশাপাশি মনের ওপরও প্রভাব ফেলে। মানবদেহের বিভিন্ন জোড়ায় ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়ে বিভিন্ন ধরনের বাতরোগের উৎপত্তি ঘটায়।

বাতরোগ যখন হয় : এ রোগে সাধারণত ৪০-৫০ বছর বয়সী মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার হার নারীর তুলনায় অনেক বেশি। নারীদের এ রোগ সাধারণত মেনোপজের পরে বেশি হয়ে থাকে। শিশু ও তরুণদের সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না।

বাতরোগ যেভাবে হয়ে থাকে : মূত্রের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড প্রতিদিন আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে মানবদেহের যকৃৎ যখন তার পরিমাণ থেকে বেশিমাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে ফেলে এবং তা রক্তে পরিমাণে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায় ও বের হতে পারে না, তখন বাতরোগের উৎপত্তি হয়।

খাবারের উৎস : খাবার থেকে ইউরিক অ্যাসিড উৎসের মধ্যে লাল মাংস, ক্রিম ও রেড ওয়াইন অন্যতম। কিডনি রক্ত থেকে স্বাভাবিক মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড ফিল্টার করে বের করতে না পারলে বাতরোগের উপসর্গ দেখা দেয়। ধীরে ধীরে ইউরিক অ্যাসিড বিভিন্ন জয়েন্টে ক্রিস্টালরূপে জমা হতে থাকে। ফলে জয়েন্টগুলো ফুলে যায়, জয়েন্টে প্রদাহ তৈরি হয় এবং ব্যথার সৃষ্টি করে। এতে জয়েন্টগুলো ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যায়।

বাতরোগের কারণ : বিভিন্ন জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিড জমার কারণেই বাতরোগ হয়ে থাকে। শতকরা ২০-২৫ ভাগ বাতের রোগে আক্রান্তদের পারিবারিক ইতিহাস পাওয়া যায়। যেসব কারণে বাতরোগের ঝুঁকি বাড়েÑ এর মধ্যে ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ, অতিরিক্ত ওজন সিকল সেল অ্যানিমিয়া উল্লেখযোগ্য। নিয়মিত অ্যালকোহল পান করলে বাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ধরনের ওষুধÑ অ্যাসপিরিন, ডাই-ইউরেটিকস, লিভোডোপাজাতীয় ওষুধ বাতের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

বাতরোগের চিকিৎসা : বাতরোগের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা এবং অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করা। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এ জন্য একজন ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট আপনাকে সঠিক মাত্রার ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে আপনাকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

প্রতিরোধ : এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এ জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ছাড়াও রোগীকে প্রচুর পানি পান করতে হবে। সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত হাঁটা বা শারীরিক ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। যেসব খাবার ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, তা এড়িয়ে চলতে হবে।

লেখক : ফিজিওথেরাপি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877